নিজস্ব প্রতিবেদক: পূর্ব ভারতের শীর্ষস্থানীয় বহু-বিষয়ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মণিপাল হসপিটালস মুকুন্দপুরে তাদের আধুনিক সম্পূর্ণ নিউরো টীম-এর শুভসূচনা করল। এই উদ্যোগ মস্তিষ্ক, স্নায়ু ও মেরুদণ্ড–সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় একাত্ম, গবেষণাভিত্তিক ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত করবে।
নিউরোলজিস্ট, নিউরোসার্জন, নিউরো ইন্টারভেনশনিস্ট, নিউরো রেডিওলজিস্ট এবং নিউরো পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এই সমষ্টিগত দলটি প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের জন্য অন্যতম মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করবে। দ্রুত চিকিৎসা, উন্নত প্রযুক্তি ও সার্বিক সুস্থতার দিকে গুরুত্ব দিয়ে এই প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছে।
এই ঘোষণা জানানো হয় মুকুন্দপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে, যেখানে নেতৃত্ব দেন ডঃ জয়ন্ত রায়, পরিচালক ও পরামর্শক, আঞ্চলিক প্রধান (পূর্ব)–নিউরোলজি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু বিশিষ্ট নিউরো–বিশেষজ্ঞ: ড. অম্লান মন্ডল – কনসালটেন্ট, অ্যাডাল্ট ও পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি (ইএম বাইপাস); ড. নিখিল প্রসূন সিং – এইচওডি, নিউরোলজি (ব্রডওয়ে); ড. দীপেন্দ্র কুমার প্রধান – সিনিয়র কনসালটেন্ট, নিউরোসার্জারি (মুকুন্দপুর); ড. রাজন কুমার – কনসালটেন্ট, নিউরোসার্জারি; ড. বিশ্বজিৎ পাল – কনসালটেন্ট, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি (ঢাকুরিয়া); ড. নির্মাল্য রায় – কনসালটেন্ট, নিউরো ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজি; ড. অনন্যা সেনগুপ্ত, ড. অভীক মুখার্জি, ড. শুভদীপ ব্যানার্জি, ড. সম্পূর্ণা চৌধুরী – কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট, মুকুন্দপুর, অন্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা যেমন: ড. ইন্দ্রনীল ঘোষ – নিউরো অ্যানেস্থেসিয়া, ইনটেনসিভ কেয়ার ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার, ড. সৌমেন মেউর – এইচওডি ও সিনিয়র কনসালটেন্ট, পেডিয়াট্রিক্স; ড. শুগতা চক্রবর্তী – রিজিওনাল হেড, মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মণিপাল হসপিটালস ইস্ট|
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মণিপাল হসপিটালস, আশা নিকেতন নামক অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, সেখানে থাকা শিশুদের জন্য বিনামূল্যে নিউরো কনসালটেশন দেওয়া হচ্ছে।
এই নিউরো প্রোগ্রামের অন্যতম মূল স্তম্ভ হলো অ্যাকিউট স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম, যা আন্তর্জাতিক স্ট্রোক কোড মেনে পরিচালিত হয়। এতে রোগীর অবস্থা দ্রুত নির্ণয়, অবিলম্বে নিউরোইমেজিং, থ্রোম্বোলাইসিস বা ক্লট অপসারণের মতো অত্যন্ত জরুরি চিকিৎসা ‘গোল্ডেন আওয়ার’-এর মধ্যেই সম্পন্ন হয়।
নিউরো ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস সরবরাহ করে সড়ক দুর্ঘটনা, পতন বা তীব্র চোটে আক্রান্ত রোগীদের জরুরি সেবা—বিশেষ প্রশিক্ষিত ট্রমা টিম ও উন্নত অস্ত্রোপচার সুবিধার মাধ্যমে।
পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি ও পিআইসিইউ ইউনিট শিশুদের মৃগী, সেরিব্রাল পালসি, বৌদ্ধিক বিকাশে বিলম্ব বা জন্মগত নিউরো সমস্যার জন্য বিশেষ যত্ন প্রদান করে। এখানে কাজ করেন শিশুদের জন্য প্রশিক্ষিত নিউরোলজিস্ট ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার এক্সপার্টরা।
নিউরোলজির প্রাথমিক লক্ষণ যেমন মাথা ঘোরা, তীব্র মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দুর্বলতা ইত্যাদি নিয়ে রোগীরা যাতে দ্রুত চিকিৎসা পান, তার জন্য মুকুন্দপুরে চালু হয়েছে আর্জেন্ট নিউরোলজি ক্লিনিক, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা।
নতুন সংযোজন হিসেবে রয়েছে স্ট্রোক রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড প্রিভেনশন ক্লিনিক, যেখানে রোগীর লাইফস্টাইল, পরিবারিক ইতিহাস ও জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে স্ট্রোক প্রতিরোধে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এটি স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের উপর জোর দেয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডঃ জয়ন্ত রায়, ডিরেক্টর ও অ্যাডভাইজর, রিজিওনাল হেড (পূর্ব) – নিউরোলজি, মণিপাল হাসপাতালস বলেন, “গুণগত মান ও সবার নাগালের মধ্যে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার প্রতি আমাদের টিমের প্রতিশ্রুতি অটুট। মণিপাল-এ আমরা আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল মানদণ্ড অনুসরণ করি এবং চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্সিং স্টাফ
পর্যন্ত গোটা কেয়ার ইকোসিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করি যাতে প্রতিটি ইউনিটে নিরবিচারে মান বজায় থাকে। গোটা পৃথিবীতে প্রতি চারজনের একজন জীবনের কোনও এক সময়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাই শুধু চিকিৎসা নয়, রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করাও আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।মুকুন্দপুর ইউনিটে রয়েছে একটি ডেডিকেটেড পেডিয়াট্রিক আইসিইউ ও একটি স্ট্রোক প্রিভেনশন ক্লিনিক, যা শক্তিশালী নিউরোভাসকুলার রিসার্চ ইউনিট দ্বারা সমর্থিত। আমরা গর্বের সঙ্গে জানাতে চাই যে আর্জেন্ট নিউরোলজি ক্লিনিক—যা ইতিমধ্যেই ইউকে ও ইউএসএ-তে জনপ্রিয়—ভারতে প্রথমবার আমরা চালু করছি দক্ষিণ কলকাতার
মুকুন্দপুর ক্যাম্পাস এবং উত্তর কলকাতার ব্রডওয়ে ইউনিটে।আশা নিকেতন-এর শিশুদের জন্য আমাদের ফ্রি নিউরো কনসালটেশন উদ্যোগ আমাদের ইনক্লুসিভ হেল্থকেয়ার-এর প্রতি আন্তরিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা শুধু এই একটি সংগঠনের সঙ্গেই নয়, আরও অনেক সম্প্রদায়ের সঙ্গে এই ধরনের স্বাস্থ্যসেবার পরিসর বিস্তৃত করতে চাই—কারণ প্রতিটি মানুষই প্রতিরোধমূলক ও সহানুভূতিশীল চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে, যা তাদের জীবনকে আরো সুস্থ ও শক্তিশালী করে তোলে।”
এ প্রসঙ্গে ড. অম্লান মন্ডল, কনসালট্যান্ট – অ্যাডাল্ট ও পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি, মণিপাল হাসপাতাল – ইএম বাইপাস, বলেন, “এই নিউরো প্রোগ্রামটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর মাল্টিডিসিপ্লিনারি সমন্বয়। এক ছাতার নিচে সব নিউরো সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করা হয়েছে, যা জটিল নিউরোলজিক্যাল কেস ম্যানেজমেন্টে দারুণ কার্যকর। ব্রেন টিউমার হোক বা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, কিংবা কোনো শিশুর নিউরোসার্জিক্যাল প্রয়োজন—আমাদের ইউনিফায়েড টিম অ্যাপ্রোচ দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিখুঁত চিকিৎসা ও নির্বিঘ্ন পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ারে সহায়তা করে। আমাদের নিউরো আইসিইউ হাই-রিস্ক কেস পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত এবং নিউরো-অ্যানাস্থেশিয়ার জন্য আলাদা প্রোটোকল রয়েছে। এখানে আমরা শুধুমাত্র একটি হাসপাতাল ইউনিট তৈরি করছি না—আমরা এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছি যেখানে ইনোভেশন ও দায়িত্ববোধ একসাথে চলেছে, এবং যার কেন্দ্রে রয়েছে রোগীর দ্রুত আরোগ্য।”
ডঃ দীপেন্দ্র কুমার প্রধান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট – নিউরোসার্জারি, মণিপাল হাসপাতাল – মুকুন্দপুর, তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে বলেন, “নিউরোসার্জারিতে প্রতিটি সেকেন্ডই একটি জীবন বাঁচানোর সুযোগ—অথবা সেই জীবনকে চিরতরে বদলে দেওয়ার মুহূর্ত। স্ট্রোক হোক, ব্রেন ইনজুরি হোক বা জটিল স্পাইন কেস—প্রতিটি সিদ্ধান্তই সেই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের অ্যাকিউট স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে আমরা একটি এমন সিস্টেম তৈরি করেছি যেখানে সার্জিক্যাল নিখুঁতা ও দ্রুততা একত্রে কাজ করে—যার ফলে জরুরি বিভাগ থেকে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত নির্বিঘ্ন সমন্বয় সম্ভব হয়। কিন্তু সত্যিকারের আরোগ্য শুধু সার্জারিতে শেষ হয় না। আমাদের স্ট্রোক রিস্ক ক্লিনিক ও নিউরো ট্রমা সার্ভিসেস-এর মাধ্যমে আমরা রোগী ও পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করছি, পুনরায় স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাচ্ছি এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সুস্থতার পথে হাঁটতে সহায়তা করছি। আজকের নিউরোসার্জারি কেবল অপারেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি হল রোগীর পুরো যাত্রায়, সংকট থেকে পুনরুদ্ধার পর্যন্ত, পাশে থাকার বিষয়।”
ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার – মণিপাল হসপিটালস – ইস্ট, বলেন,
“আমাদের মূল লক্ষ্য সবসময়ই ছিল সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে সময়মতো ও মানসম্মত চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া। নতুন এই নিউরো ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে আমরা সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলিকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি, যাতে রোগী ও তাঁদের পরিবারকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে চিকিৎসা, ডায়াগনোসিস বা ফলো-আপের জন্য না যেতে হয়। হঠাৎ স্ট্রোক হোক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত সমস্যা বা শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন—আমাদের টিম সবদিক থেকেই দ্রুত, স্পষ্ট ও সহানুভূতিশীল সেবা দিতে প্রস্তুত। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষের আস্থা অর্জন করা এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া।”
এই কম্প্রিহেনসিভ নিউরো প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে মণিপাল হসপিটালস, মুকুন্দপুর নিউরোসায়েন্স -এ পূর্ব ভারতের এক সেরা গন্তব্য হিসেবে নিজেদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। প্রযুক্তি, দক্ষতা, গবেষণা ও মানবিকতার এক অনন্য সমন্বয়ে গড়ে তোলা এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর যত্নে, প্রতিটি সেকেন্ডের মূল্য অপরিসীম।