IMG-20250922-WA0109

আনন্দদিন প্রতিবেদক: ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে বাঙালিরা ইতিমধ্যেই দিন গুনছে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দুর্গাপুজোর আনন্দে ডুবে যাওয়ার জন্য। ভারতের প্রাচীনতম রেডিও অনুষ্ঠান মহিষাসুর মর্দিনী-তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠে দেবীপক্ষের আগমনী ঘোষণা হয়ে গেছে। এ শহরের প্রতিটি অলিতে-গলিতে ধুনুচি নাচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজতে প্রস্তুত ঢাকের বাদ্য। ঢাকের তালে প্রাণ পায় দুর্গাপুজো, আর প্রতিটি ভক্তের হৃদয় ভরে ওঠে উৎসবের আনন্দে। যেমন একটি তালে ভুল হলে ধুনুচি নাচের ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি একটি হৃৎস্পন্দন থেমে গেলে জীবন বিপন্ন হতে পারে।
এই বিশ্ব হৃদয় দিবসে, “Don’t Miss a Beat” শীর্ষক থিমকে সামনে রেখে, মণিপাল হাসপাতাল আয়োজন করল এক বিশেষ সিপিআর (CPR) প্রশিক্ষণ কর্মশালা ঢাকিদের জন্য—যাঁরা দুর্গাপুজোর প্রাণ ও হৃদস্পন্দন। কর্মসূচির সূচনা হয় ঢাকিদের CPR প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। পরবর্তীতে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে আসন্ন ছবি রক্তবীজ ২-এর পরিচালক-অভিনেতা-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দিনের মূল আকর্ষণ ছিল হেলদি হার্ট পেশেন্ট সামিট, যেখানে রোগীরা তাঁদের অনুপ্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং খ্যাতনামা কার্ডিয়োলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনরা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন।
মণিপাল হাসপাতালের বিশ্বাস, সমাজের প্রত্যেক মানুষকে, তাঁর পটভূমি বা সামর্থ্য যাই হোক না কেন, সংকটের সময় জীবন বাঁচানোর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। আজ কলকাতার প্রায় ১৫০০ মানুষ CPR প্রশিক্ষণ অর্জন করলেন, যা তাঁদের প্রকৃত CPR হিরো হওয়ার পথে এগিয়ে দিল। বেঙ্গালুরুতে মণিপাল হাসপাতাল ইতিমধ্যেই সিপিআর প্রশিক্ষণ ও জরুরি পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। আজকের এই বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে ঢাকি ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অনন্য সংযোগ ঘটলো, যা সকলকে মনে করিয়ে দিল—যেমন ঢাকের তালে প্রাণ পায় দুর্গাপুজো, তেমনই সুস্থ হৃদয়ই জীবনের ছন্দ বহন করে। এখন ঢাকিরাও সংকটকালে এগিয়ে এসে নিশ্চিত করতে পারবেন যেন জীবনের তাল কখনো থেমে না যায়।
এ বছর, কলকাতার মণিপাল হাসপাতাল রোগীদের সহায়তার জন্য পুজোর সময় একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উৎসবের দিনে চিকিৎসকের প্রাপ্যতা নিয়ে যে আশঙ্কা থাকে, তা দূর করতে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে ২৪x৭ টেলিকমিউনিকেশন সুবিধা, যেখানে রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যেকোনো সময় ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ ও সচেতনতা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মণিপাল হাসপাতাল ঢাকুরিয়া-র সিনিয়র কনসালট্যান্ট – ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ডা. সৌম্যকান্তি দত্ত বলেন, “হার্ট অ্যাটাক তখনই হয় যখন হৃদপিণ্ডের একটি অংশে রক্ত সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণত রক্ত জমাট বাঁধার কারণে। প্রাথমিক সতর্ক সংকেত যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা প্রচণ্ড ক্লান্তি কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। প্রতিরোধের সেরা উপায় হলো হৃদযন্ত্র-সুরক্ষিত জীবনযাপন—নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, রক্তচাপ ও শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান এড়িয়ে চলা। সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া গেলে বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।”
ব্যবহৃত প্রযুক্তি প্রসঙ্গে মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুর-এর কনসালট্যান্ট ও ইন-চার্জ – কার্ডিওলজি, ডা. সৌম্য পাত্র বলেন,
“মণিপাল হাসপাতালে আমরা উন্নত প্রযুক্তি যেমন হৃদযন্ত্রের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের জন্য 3D ইমেজিং, হাই-রেজোলিউশন ইনট্রাভাসকুলার আল্ট্রাসাউন্ড এবং অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাব ব্যবহার করি। এসব আধুনিক সরঞ্জাম জটিল হৃদরোগ নির্ণয়ে অসাধারণ স্বচ্ছতা প্রদান করে, নিখুঁত চিকিৎসা হস্তক্ষেপে সহায়তা করে এবং রোগীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ ফলাফল নিশ্চিত করে।”
ন্যূনতম আক্রমণাত্মক হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার ও অস্ত্রোপচারের পর যত্ন প্রসঙ্গে মণিপাল হাসপাতাল মুকুন্দপুর ক্লাস্টার-এর ডিরেক্টর -কার্ডিওভাসকুলার ও থোরাসিক সার্জারি, ডা. কুনাল সরকার বলেন, “আধুনিক ন্যূনতম আক্রমণাত্মক কার্ডিয়াক সার্জারির মাধ্যমে এখন ভালভ মেরামত বা প্রতিস্থাপন, রক্তনালী পরিষ্কার করা এমনকি জন্মগত হৃদরোগও ছোট কী-হোল চেরা দিয়েই চিকিৎসা করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াগুলি রোগীর ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়, সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভের সুযোগ দেয়। ফলে রোগীরা প্রচলিত ওপেন-হার্ট সার্জারির তুলনায় অনেক দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। তবে, আরোগ্যের পথ হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পরেই শেষ হয় না। নিয়মিত কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং চিকিৎসকের নির্ধারিত ওষুধ সঠিকভাবে সেবন করা দীর্ঘমেয়াদি হৃদস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। প্রতিরোধ ও ধারাবাহিক যত্নই ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানোর মূল চাবিকাঠি। আর মণিপাল হাসপাতালে আমরা পূর্ব ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত কার্ডিয়াক কেয়ার প্রদান করে থাকি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডাঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত, চিফ অপারেটিং অফিসার, মণিপাল হাসপাতালস (ইস্ট) বলেন,“মণিপাল হাসপাতালে আমরা গর্ব অনুভব করি পূর্ব ভারতের অন্যতম আধুনিক কার্ডিয়াক কেয়ার বিভাগ নিয়ে, যেখানে রয়েছে ৭টি ক্যাথল্যাব, ৭৫ জন কার্ডিয়োলজিস্ট এবং ১৫ জন কার্ডিওথোরাসিক ভাসকুলার সার্জন, যারা একসঙ্গে বিশ্বমানের চিকিৎসা প্রদান করেন। আধুনিক

প্রযুক্তি এবং দক্ষ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আমরা সম্পূর্ণ পরিসরে কার্ডিয়াক কেয়ার প্রদান করি—অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও ভালভ রিপেয়ারের মতো জটিল ইন্টারভেনশনাল প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি এবং অ্যাডভান্সড ইমেজিং পর্যন্ত। এই বিশ্ব হৃদয় দিবসের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের দক্ষতাকে হাসপাতালের দেয়ালের বাইরে নিয়ে যেতে চাই, ঢাকিদের CPR প্রশিক্ষণ দিয়ে, যাতে তারা হঠাৎ কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সির সময় তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতে পারেন। যেমন ঢাকের তালে দুর্গাপুজো প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি সময়মতো পদক্ষেপ একটি মানুষের হৃদস্পন্দন সচল রাখতে পারে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *