IMG-20240922-WA0011

আনন্দদিন প্রতিবেদক: ভারতের সমৃদ্ধ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্বর্গীয় পণ্ডিত বুন্দি মহারাজ সঙ্গীত বিদ্যাপীঠ আয়োজন করল “গুরু শ্রদ্ধাঞ্জলি”, তিনজন কিংবদন্তি তথা তবলা সম্রাট গুরু স্বর্গীয় পণ্ডিত বুন্দি মহারাজ,সঙ্গীত শিরোমণি স্বর্গীয় পণ্ডিত মোহনলাল মিশ্র এবং জ্ঞান আচার্য স্বর্গীয় পণ্ডিত দামোদর মিশ্র-এর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। এই বিশেষ অনুষ্ঠান তাঁদের অতুলনীয় অবদানকে সম্মান জানাতে আয়োজন করা হয়, যেখানে বিশিষ্ট শিল্পীদের অসাধারণ পরিবেশনা ছিল বিশেষ আকর্ষণ।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত দীপক মিশ্র এবং পণ্ডিত প্রকাশ মিশ্রের এক দুর্দান্ত যুগলবন্দী। তারা উৎকর্ষতায় ভরপুর একটি পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। বারাণসীর কবির চৌড়ার অধিবাসী এই বেনারস ঘরানার পঞ্চদশ প্রজন্মের শিল্পীরা খেয়াল গায়কীর বিশেষজ্ঞ। তাদের পরিবার প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীতের এই মহান ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে, যা তাদের দাদু পণ্ডিত দামোদর মিশ্র এবং বাবা সঙ্গীত শিরোমণি পণ্ডিত মোহনলাল মিশ্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত। তাদের মধুর কণ্ঠ এবং রাগগুলির অসাধারণ দক্ষতায় তারা বেনারস ঘরানার ধারক বাহক হিসেবে সঙ্গীতজগতে প্রতিষ্ঠিত। তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন এবং কলকাতা ও বারাণসীর ছাত্রদের মধ্যে গুরু-শিষ্য পরম্পরা বজায় রেখে সঙ্গীত শিক্ষাদান করছেন।

এই যুগলবন্দীতে সঙ্গত করেছিলেন বিশিষ্ট সেতারবাদক শ্রী শুভঙ্কর ঘোষ। তাঁর সেতারের সূক্ষ্ম সুরগুলো পরিবেশনার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। পুরো সন্ধ্যার তালের ভার বহন করেন বিখ্যাত তবলা শিল্পী পণ্ডিত গোপাল মিশ্র, যাঁর তবলার অসাধারণ কারিকুরি দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে।

এই আবেগঘন শ্রদ্ধার্ঘ্য সম্পর্কে পণ্ডিত দীপক মিশ্র বলেন, “যাঁরা আমাদের সঙ্গীতজীবন গড়ে তুলেছেন, তাঁদের স্মৃতিতে সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারা এক অসীম সম্মান। তাঁদের শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পথ প্রদর্শক হয়ে রয়েছে, আর আজকের এই পরিবেশনা তাঁদের স্মৃতির প্রতি এক ক্ষুদ্র নিবেদন ছিল।” পণ্ডিত প্রকাশ মিশ্র যোগ করেন, “গুরু-শিষ্য পরম্পরার মূল হল আমাদের গুরুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমরা আশা করি যে, শ্রোতারা আমাদের গুরুর সঙ্গে আমাদের গভীর সংযোগ অনুভব করতে পেরেছেন। তাঁদের আশীর্বাদ আমাদের প্রতিটি নোটে প্রতিফলিত হয়েছে।”

সঙ্গীতানুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল রাগ বৃন্দাবনী সারং-এর একটি দলগত পরিবেশনা দিয়ে, যা সন্ধ্যাটির এক প্রাণবন্ত সূচনা করে। এরপর রাগ ভীমপলাশ্রী এবং রাগ পটদীপ-এর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা হয়, যা শিল্পীদের রাগগুলির গভীর বোঝাপড়া এবং ব্যাখ্যাকে তুলে ধরে। একটি হৃদয়স্পর্শী স্বরধারা ভজন পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি এক ভক্তিমূলক আবহ তৈরি করে, যা সকলকে শান্তির অনুভূতি প্রদান করে।

সন্ধ্যার অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাগ মুলতানি-তে একটি একক পরিবেশনা, যেখানে শিল্পী তাঁদের আবেগের গভীরতা এবং কারিগরি দক্ষতার নিখুঁত সমন্বয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। পরিবেশনার সমাপ্তি হয় রাগ পুরিয়া কল্যাণ এবং রাগ শ্যাম কল্যাণ-এর শক্তিশালী দলগত পরিবেশনার মাধ্যমে, যা শ্রোতাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়।

এই সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গত করেছিলেন রাজনারায়ণ ভট্টাচার্য, কৃষ্ণেন্দু পাল, সন্দীপ দুবে, শুভম মিশ্র এবং সায়ন চট্টোপাধ্যায়, যাঁরা তাঁদের অসাধারণ সঙ্গীতশৈলীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সাফল্যে বিশেষ অবদান রাখেন।

“গুরু শ্রদ্ধাঞ্জলি” অনুষ্ঠানটি কেবল শিল্পীদের সঙ্গীতকৃতিত্ব উদযাপন করেনি, বরং গুরুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনও ছিল, যাঁদের শিক্ষা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁদের অমূল্য অবদানের প্রতি এটি ছিল এক উপযুক্ত শ্রদ্ধার্ঘ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *